তুঁত ফলের ইংরেজি নাম মালবেরির অর্থ জাম। উচ্চ মূল্যের রসালো টক ও মিষ্টি স্বাদের এই ফলের আদিবাস চীন দেশে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তুঁত ফলের চাষ হয়ে থাকে। তুঁত ফলের জুস, জ্যাম ও জেলি সুপরিচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া তুঁত ফল বেশি সুস্বাদু।
বসন্তের শুরুতে গাছে গাছে নতুন পাতা আসে। যে কোন ছোট টব বা পাত্র এমন কি পলিব্যাগে লাগালেও গাছ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে, যেন শুধু ফল দেয়ার জন্যই তার জন্ম। সারা বছরই ফল দেয়। কিছু দিনের মধ্যেই ফল পাকে। পাকা ফল রসালো এবং টক-মিষ্টি হয়ে থাকে। তুঁত বা মালবেরি গাছের কান্ড থেকে উৎপন্ন মঞ্জরী দন্ডের ছোট ছোট ফুলগুলো ঘন হয়ে ফুটে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা আলাদা। তুঁত গাছের পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সুঁচালো। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকে। তুঁত ফল প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রং ধারণ করে থাকে। এক সময় গ্রামে প্রচুর তুঁত গাছ দেখা যেতো।
তুঁত গাছের পাতা রেশম পোকার মথকে খাওয়ানো হয়। যার লালা থেকে রেশম তৈরি হয়। রেশম পোকার তৈরি বাসা বা গুটি নানা প্রক্রিয়া শেষে তা থেকে তৈরি হয় রেশমি সুতা। এই সুতায় তৈরি হয় সিল্ক বা রেশমি কাপড়। লালমনিরহাটে রেশম পোকার খাদ্যের জন্যই ব্লক পদ্ধতিতে তুঁত গাছ রোপন করা হয়েছে। আগে বাংলাদেশে তুঁত কখনও ফলের জন্য চাষ করা হতো না। বেশ কয়েক বছর ধরে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়াসহ বিদেশ থেকে ভিন্ন প্রজাতির মালবেরি গাছের চারা এনে চাষ করা হচ্ছে। মূলত ব্যক্তি উদ্যোগে ওই সব জাতের মালবেরির আবাদ হলেও সম্প্রতি সরকারিভাবেও এই চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস ব্লকের রামজিবন, ভোলার চওড়া ও নিচপাড়া এবং বড়বাড়ী ইউনিয়নের ঘোরামারা রোড মুসার তেপুতিতে প্রদর্শনী আকারে এসব জাতের তুঁত গাছের চাষ করা হচ্ছে।
কৃষিবিদরা জানান, এই তুঁত বা মালবেরিকে ‘ব্লাক বেরি’ বলে চড়া দামে চারা বিক্রি করা হয়। এখন অনেকের বাসার ছাদেও শোভা পাচ্ছে তুঁত গাছ। শালিক, টিয়া, বুলবুলি, টুনটুনিসহ অনেক পাখিরই খুব প্রিয় ফল তুঁত। ক্যান্সার প্রতিরোধসহ ঔষুধী গুণ ছাড়াও এই ফলের গাছের বাকল, পাতা ও কাঠের বহুবিধ ব্যবহারের কথা শোনা যায় নানাজনের মুখে মুখে।
প্রসঙ্গত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড, রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র লালমনিরহাট কর্তৃক রাস্তার দু-ধারে ব্লক পদ্ধতিতে তুঁত গাছ রোপণ করা হয়েছে। অর্থায়নে রেশম চাষের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলার দারিদ্র হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উক্ত প্রদর্শনীগুলো দেওয়া হয়েছে।